আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোয় মানুষ কেবলই দেখানোর চেষ্টা করে সে কতটা সুখী আছে ! তাদের জীবনও কতটা বৈচিত্র্যময়, আনন্দে আর নতুন নতুন ঘটনায় ঠাসা। আর এদিকে আমার দিনটা সেই গত দেড় বছর ধরে একই ঘড়ির কাঁটা মেনেই চলেছে।
এই সব ভিডিও, রিলস, পোস্ট দেখলে আমার কেবল একটা জিনিসই মনে হয় মানুষ কিকরে এত সুখে আছে..? আমার জীবনটাই কেমন জানি সানলাইট ছাড়া ফিকে কালারের হয়ে গেছে।
তবে কিছু জিনিসে কেমন যেন সন্দেহ জাগে ! খাবার হোটেলে মানুষ যাচ্ছে কেন..? ভালো মতো পোস দিয়ে ছবি তোলার জন্য। শুধু তাই নয় আজকাল ছোট বড় কোনো কাজই একটা সোশ্যাল মিডিয়া আপডেট ছাড়া শেষই হয় না! দুর্গা পুজোতে ঠাকুরকে পেছনে রেখে সেলফি, প্যান্ডেলের সামনে সেলফি। আর এ সেলফি তুলতে গেছি নাকি ঠাকুর দেখতে..!!
আজকাল মানুষ কোনো ভালো কিছু করে আনন্দ পায় না, সেটা লোককে দেখিয়ে আনন্দ পায়। show off এর একটা big trend চলছে আজকাল। আগেকার দিনে নিজেদের গয়না, শাড়ি নিয়ে show off করার একটা অভ্যেস ছিল। জিনিসটা এখনও আছে, তবে খালি দু একটা জিনিসে আটকে নেই, সব জিনিসে ছড়িয়ে পড়েছে।
সামান্য পুজোর আগেই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেছিল। কলেজে ভর্তির জন্য অনেকগুলো টাকা বেরিয়ে যাওয়ায় এবার তেমন জামা কাপড় হয়নি, তবে এতে মন খারাপ ছিল না, মন খারাপ সেইসব লোকজনদের দেখে যারা রোজ রোজ শপিং এর সেলফি, জুতোর সাথে সেলফি, খাবারের সাথে সেলফির স্ট্যাটাস আপলোড করেই চলেছিল। কিন্তু মানুষ এরকম দেখায় কেন? এর ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, সব ক্ষেত্রেই থাকে তাদের দিক থেকে ব্যাপারটা কিছুটা বর্ণনা করার চেষ্টা করি।
আমরা রোজ যে জিনিসটা করি, যেমন রাতে যে রুটি বা ভাত খাই তার স্ট্যাটাস তো দিইনা। কিন্তু হোটেলে খেতে গেলে দি। may be যাদের কাছে এটাও নর্মাল ব্যাপার তারা এটারও স্ট্যাটাস দেবে না। স্পেশাল জিনিসটা নিয়ে আমরা স্ট্যাটাস দিই, কেন না লোকেরা এটা দেখে কি ভাবলো তা দেখার জন্য, কে কে দেখলো, কি কি রিয়াক্সন এলো সেগুলো দেখার জন্য।
যেমন আমার প্রায় রোজই আড্ডা হয়, রোজই ফ্যামিলি টাইম স্পেন্ড করি তাই #addatime #bff #familytime ট্যাগ গুলোর কোনো প্রয়োজনই পরে না। তেমনি কেউ বসেই পোস্টের জন্য ছবি তোলার জন্য।
সে আমরা যে যেমন ভালোবাসি স্ট্যাটাস দিই, ইচ্ছে মত দিতেই পারি। কিন্তু এই যে মার্গবাবুর দৌলতে এত বন্ধুর সামনে ভালো ভালো স্ট্যাটাস দিচ্ছি...ভালো থাকার স্ট্যান্ডার্ড মেন্টেন করে চলেছি; মন খারাপ হলে এদের পাশে পাবো তো?
না, ফ্রেন্ড লিস্টের একটা বন্ধুও কষ্টের কথা শুনতে চায় না। তারা উল্টে বলতে চায়। মন খারাপতো সবারই হয়। কিনতু কারোর কাছেই সেই শোনার লোক থাকে না। সবাই তো বক্তা হতে চায়..! এখানে আমি তাদের কথা বাদই দিলাম, যারা কথা শোনে অন্যকে বলার জন্য। তখন কি দরকার হয় রিলেশনশিপের?তাতেও লাভ হয় কি..!?
খুব মন খারাপ হলে আমার মনে হয় মানুষ কত একা। নিজের খারাপ লাগাটা কাউকে কোনো ভাষাতেই ঠিক করে বোঝানো যায় না। communication gap টা তখন খানিক বুঝতে পারি। খানিক সময় তো নিজেই বোঝা যায় না মনটা খারাপ কেন..? সত্যিই তো, কেন খারাপ হয় মন? মন আদৌ আছে নাকি?
হয়ত মানুষ একা থাকতে ভয় পায়, তাই তো মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। দল বেঁধে থাকতে ভালোবাসে সেই গুহারযুগ গুলো থেকে। কারণ আসলে সে একা। এক এসেছি, একা চলে যাবো শেষ দিনে। তাও তো পথ চলতে হবে। আর রাস্তা যত বড় হবে, একা হলে তত একজন খুব প্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে। একজনের থাকাটা খুব দরকার। কিন্তু তাকে পাবো কোথায়?
আমি একাকীত্ব কাটানোর জন্য সঙ্গী ভাবি যাকে, সে অন্য কাউকে সঙ্গী বানানোর স্বপ্ন দেখে। এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় মানুষ একাই রয়েছে। আর খালি ভালো থাকার অভিনয় করে উঠেছে।
কিন্তু কখনো তো মেকআপটা খসে পড়বে, কারুর সামনে তো আসল চেহারাটা দেখাতে হবে; নাকি মুখোশটা শক্ত হয়ে আটকে যাবে মুখে, খুলতে চাইলেও আর খোলা যাবে না..! সারাজীবন একটা মিথ্যে চরিত্রে অভিনয় করে যেতে হবে।
কিছু খুচরো খুচরো ভাবনায় মোড়া এই পোস্ট গুলো। বেকারই লিখি, কেউ পড়ে না। খালি বসে থাকি তোমার অপেক্ষায়, তুমি পড়বে তো..?
0 Comments